আজ শনিবার, ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিদ্ধিরগঞ্জে ডিবি পুলিশ ও সোর্সের অত্যাচারে অতিষ্ঠ নিরীহ এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা

ডিবি পুলিশ ও সোর্সের অত্যাচারে

ডিবি পুলিশ ও সোর্সের অত্যাচারে

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার আশরাফ ওরফে আসাদের বিরুদ্ধ ডিবি পুলিশ দিয়ে নিরীহ এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও গ্রেফতার বাণিজ্যের অনেক অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগগুলো বিক্ষুব্ধ শতাধিক এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে রোববার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়ার অফিসে গিয়ে তার কাছে বিষয়টি অবহিত করেন।

আশরাফ ওরফে আসাদ সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার মৃত বশির উদ্দিনের ছেলে। উত্তেজিত এলাকাবাসী আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়ার কাছে বলেন, আশরাফের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে আশরাফকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছিল। জামিনে মুক্তি পেয়ে সে পুনরায় মাদক ব্যবসা শুরু করেছে। তার মাদক ব্যবসার কারণে এলাকার যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে।

এমনকি আশরাফ এলাকার ব্যবসায়ীদের নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর হুমায়ুন ও এস আই মনিরকে দিয়ে আটক করিয়ে গ্রেফতার বাণিজ্য করাচ্ছে। এতে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ, ক্ষুব্দ। কোন কোন প্রতিবাদকারীকে আশরাফ ওরফে আসাদ ডিবি পুলিশ দিয়ে ক্রসফায়ার দেয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী ইয়াছিন মিয়াকে অবহিত করেন। এলাকাবাসী ইয়াছিন মিয়ার কাছে আশরাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার সময় ইয়াছিনের এক কর্মী ফোন করে আশরাফকে ইয়াছিন মিয়ার অফিসে আসতে বলেন। ফোন পেয়ে আশরাফ ইয়াছিন মিয়ার অফিসে আসেন ডিবির গাড়িতে (নং ঢাকা মেট্টো-চ-১৫-৯৫৪০) চড়ে। সেই গাড়িতে ডিবির ইন্সপেক্টর হুমায়ুন, এসআই মনিরসহ ডিবির অন্যান্য সদস্যরাও ছিল। ঐ এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়ার কাছে অভিযোগ করেন, গত ৪ মাস পূর্বে আশরাফ তার ক্যামিকেল কারখানায় এসে ডিবির এসআই মনিরকে দিয়ে তাকে আটক করায়। পরবর্তীতে আশরাফ ঐ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ডিবির ইন্সপেক্টর হুমায়ুন ও এসআই মনিরকে দিয়ে ব্যবসায়ীকে ছাড়িয়ে আনেন। ইয়াছিনের অফিসের পাশে অভিযুক্ত মাদকব্যবসায়ী আশরাফের জন্য অপেক্ষা করা ডিবির এসআই মনির জানায়, আশরাফ পূর্বে খারাপ ছিল। এখন ভাল হওয়ার চেষ্টা করছে। তাছাড়া আশরাফকে বলেছিলাম রাজুর (থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক) সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে। কিন্তু সে কথা না শোনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্দ হয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, ডিবির সোর্স আশরাফ ওরফে আসাদের কোন ব্যবসা বা চাকুরী না থাকা সত্ত্বেও মাদক ব্যবসা এবং গ্রেফতার বাণিজ্যের ভাগ দিয়ে একটি গাড়ি ক্রয় করেছেন। তার রয়েছে দুই স্ত্রী। একই অর্থ দিয়ে দুইটি জমি ক্রয় করেন। সম্প্রতি সে একটি জায়গায় দোতলা ভবন তৈরি করছে। মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার জনৈক কেরামতের ছেলে নুর হোসেনকে এক মাস পূর্বে ডিবি পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করায় আশরাফ।

পরে নূর হাসেন ডিবি পুলিশকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে ছাড়া পায়। অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীর নামে এক পরিবহন ব্যবসায়ীকে আটক করিয়ে ২ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে ডিবি পুলিশ থেকে ছাড়া পায়। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করলে তার বাবা-মাকে মাদক দিয়ে ঢাকা ডিবি দিয়ে ধরিয়ে দেয় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিনের কাছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং নাসিক ২নং ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়াকে জানায়, মাদক ব্যবসায়ী ও ডিবি সোর্স আশরাফের মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় নারায়ণগঞ্জ ডিবির পুলিশের ইন্সপেক্টর হুমায়ুন আমাকে ফোন করে হুমকি দেন। আশরাফের কোন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করতে ইন্সপেক্টর হুমায়ুন শাসিয়েছেন বলে ইয়াছিন মিয়ার কাছে মৌখিকভাবে আমিনুল হক রাজু জানান।

এলাকাবাসীর অভিযোগ শুনে থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া এলাকাবাসীকে পরামর্শ দেন, অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আশরাফ এবং ডিবির ইন্সপেক্টর হুমায়ুন, এসআই মনিরসহ গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগে অভিযুক্ত অন্যান্য পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দেয়ার জন্য। পরবর্তীতে এলাকাবাসী তার কার্য্যালয় ত্যাগ করে।